মোঃ দিদারুল ইসলাম, পেকুয়াঃ
পেকুয়ার আপামর জনতার হৃদস্পন্দন, জনপদের উন্নয়নের প্রবাদপুরুষ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা সালাহ উদ্দিন আহামদ দীর্ঘ ১০ বছরের অধিক সময় পর নিজের জন্মভূমি কক্সবাজারের পেকুয়ায় ফিরছেন। ২৮ আগস্ট বুধবার দুপুরে এক ডোমেস্টিক ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে। তাকে বরণে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে কক্সবাজার জেলা ও পেকুয়া উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
বিএনপি’র সাংগঠনিক সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৪ জুন কক্সবাজারে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিয়েছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ। আবেগ ও উচ্ছাষে ভরা সেই বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘আজকের পর হয়তো আমি আপনাদের মাঝে নাও ফিরতে পারি! যদি আমি না ফিরি, আমি যদি নির্দেশনা নাও দিতে পারি, আন্দোলন শুরু হলে আপনারা সবকিছু অচল করে দেবেন। সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। রাজনৈতিক মাঠের প্রজ্ঞাময় দূরদর্শী নেতা বুঝতে পেরেছিলেন, হয়তঃ সেটাই ছিল তাঁর সর্বশেষ জনসভা। সেই বক্তৃতার পর সত্যিই তিনি ফিরতে পারেননি। সরকারবিরোধী আন্দোলন চলাকালে বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৫ সালের ১০ মে রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি ভবন থেকে সাদা পোশাকধারী আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে ‘গুম’ হন তিনি। দুই মাস একদিন পর ‘গুম রাজ্য’ থেকে মুক্ত হয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরের গলফ কোর্স ময়দানে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারলেও ফিরতে পারেননি নিজ মাতৃভূমিতে। তারপর কেটে গেছে অনেকদিন, অনেক বছর। দশ বছর পর ২৮ আগস্ট তার আগমনকে ঘিরে ঢাকঢোল বাজিয়ে প্রস্তুতি চলছে বরণে। তিনি কক্সবাজার থেকে ফিরে গিয়েছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব হিসেবে। এবার ফিরে আসছেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম ‘জাতীয় স্থায়ী কমিটি’র সদস্য হয়ে। তাই আয়োজনও তেমনই করার উদ্যোগ চলছে।
কক্সবাজার জেলা বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, প্রিয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে এমনভাবে বরণ করা হবে, যেটি অনেককাল ইতিহাস হয়ে থাকবে। জেলাজুড়ে সৃষ্টি করা হবে ‘গণপ্লাবণ’। এরইমধ্যে কক্সবাজার জেলা বিএনপি, চকরিয়া উপজেলা বিএনপি, মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা বিএনপি ও পেকুয়া উপজেলা বিএনপি প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে। দলটির এ চারটি শাখা প্রস্তুতি সভা করে গঠন করেছে শৃংখলা কমিটি। পথে পথে চলছে তোরণ নির্মাণের কর্মযজ্ঞ। ব্যানার-ফেস্টুনতো আছেই।
জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী জানিয়েছেন, সালাহউদ্দিন আহমেদ কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে সরাসরি চলে যাবেন আগুনে পুড়ে যাওয়া বিএনপি কার্যালয় পরিদর্শনে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে আওয়ামী লীগের একদল দুর্বৃত্ত জেলা বিএনপির এই ঘরটি পুড়িয়ে দেয়।
তিনি জানান, বিএনপি কার্যালয় পরিদর্শন শেষে তিনি সড়ক পথে যাবেন চকরিয়ায়। সেখানে বাস টার্মিনালে উপজেলা বিএনপির আয়োজনে রয়েছে গণসংবর্ধনা। দুপুর ২টার সেই গণসংবর্ধনায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে বাবা-মায়ের গ্রাম পেকুয়ায় যাবেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। যেখানে তিনি জন্মেছেন, খেলেছেন, মাধ্যমিক শেষ করে, রাজনীতির পাঠ নিয়ে উন্নয়ন রাজনীতিতে স্বাক্ষর রেখেছেন। পেকুয়া উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে পেকুয়া আউটার স্টেডিয়ামেও রয়েছে সংবর্ধনা।
ইউসুফ বদরী বলেন, প্রিয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে বরণ করতে জেলা শ্রমিক দল সভাপতি রফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট শৃংখলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। অসংখ্য মোটরসাইকেল আর গাড়ির বহর কক্সবাজার বিমানবন্দরে সালাহউদ্দিন আহমেদকে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করবে। বিমানবন্দর মুখরিত হবে হাজারো নেতা-কর্মী আর সাধারণ জনতার স্লোগানে। কক্সবাজার শহর থেকে শুরু করে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে চকরিয়া-পেকুয়ার পথে থাকবে শত শত তোরণ। সালাহউদ্দিন আহমেদকে স্বাগত জানিয়ে করা এই তোরণের সংখ্যা হাজার পার হতে পারে।
তিনি জানান, সালাহউদ্দিন আহমেদের কক্সবাজার আগমনকে ঘিরে জেলার প্রতিটি গ্রাম, ওয়ার্ডের নারী-পুরুষ অপেক্ষায় আছেন। তার আগমনকে ঘিরে গ্রামেগঞ্জে চলছে মাইকিং আর নানা ধরনের প্রচারণা।
সূত্র বলছে, এবারের সফরে সালাহউদ্দিন আহমেদ সপ্তাহখানেক কক্সবাজারে অবস্থান করবেন। এই সময় তিনি ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাত ও কবর জিয়ারত ছাড়াও বিগত ১৬ বছরে স্বৈরাচারি সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
Leave a Reply